সজল : নভেম্বর 2015
,                              সদ্য সংবাদ:

মঙ্গলবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৫

এনবিআরে চলছে চরম অস্থিরতা

nbr-chirmen-nazibur-rahman_jugantor-2_470অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সিনিয়র সদস্য ফরিদ উদ্দিনকে চেয়ারম্যান নিয়োগের প্রস্তাব করেছিলেন। কোনো কারণে তা সম্ভব না হলে সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম হোসেনের চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোরও প্রস্তাব ছিল অর্থমন্ত্রীর। কিন্তু প্রশাসন ক্যাডারের বাধা ও চাপে শেষ পর্যন্ত নিয়োগ দেয়া হয় পরিবেশ সচিব নজিবুর রহমানকে। কিন্তু দায়িত্ব নিয়েই নজিবুর রহমান ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রতিহিংসামূলক তৎপরতা শুরু করেন। সাবেক চেয়ারম্যান যেসব কর্মকর্তাকে পছন্দ করতেন প্রথমেই তাদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়। প্রতিমাসে কর্মকর্তাদের টেলিফোন কললিস্ট সংগ্রহ করে হয়রানি, চাপ সৃষ্টিসহ নানা ধরনের দমননীতি শুরু হয়। একই সঙ্গে কোনো কারণ ছাড়াই তুচ্ছ অজুহাতে কর্মকর্তাদের শাস্তিমূলক বদলিসহ বাধ্যতামূলক অবসর দেয়ার প্রক্রিয়া চালু করা হয়।
মজার বিষয় হচ্ছে, ৮২ ব্যাচের মেধা তালিকার শীর্ষে থাকা সদস্য শুল্কনীতি ফরিদ উদ্দিনকে অর্থমন্ত্রী এনবিআরের চেয়ারম্যান করার লিখিত প্রস্তাব করার কারণে নজিবুর রহমান তাকেই প্রধান শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং অপমানজনক আচরণ করতে থাকেন। শুধু তাই নয়, ১ম গ্রেডের সচিব মর্যাদাসম্পন্ন এ কর্মকর্তাকেই বাধ্যতামূলক অবসর দেয়ার জন্য প্রস্তাব করেন। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর আপত্তির কারণে তা সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে অর্থমন্ত্রী এনবিআর চেয়ারম্যানকে ভর্ৎসনা করেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করেছে। এর আগে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও রাষ্ট্রদূত তৌহিদ হোসেনের স্ত্রী, দক্ষ ও সৎ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত এনবিআরের সবচেয়ে সিনিয়র সদস্য জাহান আরা সিদ্দিকীকে বাধ্যতামূলক অবসরে যেতে বাধ্য করেন। ৮১ ব্যাচের সচিব পদমর্যাদার এ কর্মকর্তার অপরাধ ছিল নজিবুর রহমানের অপমান ও অসৌজন্যমূলক আচরণের প্রতিবাদ করা। এসব ঘটনায় রাজস্ব প্রশাসনের সর্বত্র তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয়। এনবিআরের আরেক সদস্য (শুল্ক ও ভ্যাট প্রশাসন) হোসেন আহমেদ চেয়ারম্যানের আপত্তিকর কার্যকলাপ নিয়ে আপত্তি করেন। অ্যাসোসিয়েশনের সভায় তিনি এনবিআরের স্বার্থবিরোধী কাজের প্রতিবাদ করে বক্তব্য দেন। পরিণতিতে হোসেন আহমেদের সঙ্গে এমনই অপমানজনক আচরণ করা হয় যে তিনি বাধ্য হন পদত্যাগপত্র জমা দিতে। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে তার পদত্যাগপত্র কার্যকর হচ্ছে। এ ছাড়া কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচিত সভাপতি এনবিআরের আরেক সদস্য ফিরোজ শাহ আলমকেও অবসরে পাঠানোর অপচেষ্টা চালান তিনি। কিন্তু সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এর আগে সম্মান বাঁচাতে আরেক সৎ কমিশনার মারুফুল ইসলাম স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে পদত্যাগ করেন। রাজস্ব প্রশাসনে কোনো চেয়ারম্যানের সঙ্গে শীর্ষ কর্মকর্তাদের এমন দূরত্ব অতীতে আর কখনও হয়নি। এভাবে একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়ার উদ্যোগও নজিরবিহীন বলে জানা গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, নজিবুর রহমান যে কজন কর্মকর্তাকে তার বিশ্বস্ত মনে করেন তাদের প্রায় সবাই বিএনপি বা জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ও বিতর্কিত। কর্মজীবনেও তাদের সততা নিয়ে প্রশ্ন আছে। অথচ চেয়ারম্যানের হয়ে সব পর্যায়েই তাদের অনাকাক্সিক্ষত খবরদারিতে সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তাই বিব্রত ও অপমানিত বোধ করছেন। এনবিআরের ১৫ জন বোর্ড সদস্যের মধ্যে তিনজন সদস্য, সিআইসির ডিজি বেলাল উদ্দিন এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের ডিজি মঈনুল খান তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। রাত ৯টার পর এসব কর্মকর্তার সঙ্গে চেয়ারম্যান নিয়মিত বৈঠক করেন। সব ক্যাডার ও নন-ক্যাডার কর্মকর্তার ভাগ্য বা ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয় এই কজন কর্মকর্তার মাধ্যমে। তারা যেসব কর্মকর্তাকে যখন যেখানে বদলি বা পদোন্নতির সুপারিশ করেন তাই কার্যকর করেন চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যানের যে কোনো পরিদর্শন বা কাজে তারাই সার্বক্ষণিক সঙ্গী। এ নিয়ে রাজস্ব প্রশাসনের সর্বত্র তীব্র ক্ষোভ-অসন্তোষ বিরাজ করছে।
শুধু তাই নয়, রাজস্ব প্রশাসনের আরেক বিতর্কিত কর্মকর্তা, যার বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি ও অনৈতিক কাজের অভিযোগ রয়েছে, এনায়েত হোসেন নামের এনবিআরের এ সদস্যকে সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন এনবিআর থেকে সরিয়ে কাস্টমস ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে শাস্তিমূলক নিয়োগ দেন। সে সময় তিনি ছিলেন সদস্য ভ্যাট বাস্তবায়ন। নজিবুর রহমান তাকে আবার এনবিআরে ফিরিয়ে এনে সদস্য ভ্যাট বাস্তবায়নেরই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেন। তার স্থলে শাস্তিমূলক নিয়োগ দেয়া হয় সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত এনবিআরের বোর্ড সদস্য খোন্দকার আমিনুর রহমানকে। যাকে শতভাগ সততার জন্য সরকার এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালক পদে ডেপুটেশনে নিয়োগ দেন। ঘটনার এখানেই শেষ নয়, অবসরে যাওয়ার আগমুহূর্তে এনায়েত হোসেনকে নজিরবিহীনভাবে দুই বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের প্রস্তাব করেছেন চেয়ারম্যান। এ নিয়েও রয়েছে তীব্র ক্ষোভ।
এ ছাড়া বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার মাহবুবুজ্জামানকে নিয়োগের কয়েক মাসের মাথায় তুচ্ছ অভিযোগে কোনো পদ-পদবি না দিয়ে এনবিআরে সংযুক্ত করা হয়। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগও পরে মিথ্যা প্রমাণিত হয়। অতীতে কোনো কমিশনারকে এভাবে এনবিআরে সংযুক্ত করার নজির নেই। ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটে স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করে সবচেয়ে বেশি সাফল্য দেখালেও কমিশনার সহিদুল ইসলামকে গুরুত্বহীন চট্টগ্রাম আপিল কমিশনারেটে নিয়োগ দেয়া হয়। দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর ঢাকার বাইরে চাকরি করার পর কমিশনার হুমায়ুন কবীরকে কমলাপুর আইসিডির কমিশনার করা হয়। কিন্তু নিয়োগের কয়েক মাসের মাথায় কোনো কারণ ছাড়াই তাকে কম গুরুত্বপূর্ণ ভ্যাট গোয়েন্দা ও নিরীক্ষা কমিশনারেটে বদলি করা হয়। এ ধরনের হয়রানি অতিরিক্ত কমিশনার ও যুগ্ম কমিশনার পর্যায়ে হয়েছে একাধিক। এমনও দেখা গেছে নিয়োগের ২-৩ মাসের মাথায় কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। আবার কমিশনার, অতিরিক্ত কমিশনার, যুগ্ম কমিশনার পর্যায়ের বহু কর্মকর্তা আছেন যাদের দুই বছরের বেশি নিয়োগ হলেও বদলি করা হচ্ছে না। এসব ঘটনা রাজস্ব আদায়ে মারাত্মক বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে বলে জানা গেছে।
সবচেয়ে ন্যক্কারজনক কাজটি হচ্ছে নিজ দফতরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে চেয়ারম্যানের নজিরবিহীন এক অভিযোগ। কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে হলে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বা এনবিআরের ক্ষমতাই যথেষ্ট। কিন্তু নজিবুর রহমান ৪১ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নজিরবিহীনভাবে ডিও লেটার পাঠিয়ে অভিনব অভিযোগ করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। (ডিও নং ৪৪৬, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, তারিখ ১৬ এপ্রিল)। এতে কাস্টমস ও ভ্যাট কর্মকর্তারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। এই ডিও লেটারে চেয়ারম্যান অভিযোগ করেন, ১. গত ১৫ এপ্রিল বিকাল সাড়ে ৫টায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে একটি সভা আহ্বান করা হয়। এটি প্রথমে এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্যদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও পরে কমিটির বাইরের কতিপয় কর্মকর্তা উপস্থিত হন। সবার জন্য উন্মুক্ত না হওয়ায় এবং অন্য সদস্যদের আহ্বান না করায় সভাটিকে গোপন বৈঠক হিসেবে গণ্য করা যায়। রাজস্ব প্রশাসন কর্তৃক গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কঠোর সমালোচনাকারীরা ওই বৈঠকের উদ্যোক্তা। ২. অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণাধীন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ রাজস্বের প্রধান উৎস কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর প্রশাসনের কার্যাবলী সুনির্দিষ্ট বিধিবিধান দ্বারা পরিচালিত হয়। সম্প্রতি রাজস্ব বোর্ডের একজন সদস্য রুলস অব বিজনেসের বিধিবিধান লংঘন করে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগকে পাশ কাটিয়ে রাজস্ব বোর্ডের ১ম সচিবের স্বাক্ষরে বিভিন্ন এসআরও জারি, গেজেট প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছেন। এসব এসআরও-তে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতামত/ভেটিয়ের জন্য রাজস্ব বোর্ড থেকে সরাসরি আইন ও লজেস্টিক বিভাগে পাঠানো হলে ওই বিভাগ তা অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের মাধ্যমে পাঠানোর পরামর্শ দেয়। কিন্তু রাজস্ব বোর্ডের কতিপয় সদস্য এ পরামর্শকে চ্যালেঞ্জ করে প্রয়োজনে রুলস অব বিজনেস এবং অ্যালোকেশন অব বিজনেস সংশোধনের দাবি উত্থাপন করেন। এ জন্য দায়ী নেতৃস্থানীয় সদস্য ও কমিশনারদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা একান্তভাবে জরুরি বলে মনে করি। বর্ণিত বিষয়সমূহ তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন রাজস্ব বোর্ডে পাঠানোর জন্য পত্রে অনুরোধ করা হচ্ছে।
সূত্রমতে, নজিরবিহীন এ চিঠি পেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে জরুরি নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এসব অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি, উল্টো নজিবুর রহমানের কার্যকলাপ নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ করা হয়েছে বলে সূত্র দাবি করেছে। নিজ প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে চেয়ারম্যানের এ ধরনের পত্র অসন্তোষকে আরও উসকে দেয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
এনবিআরের একাধিক সদস্য এবং কমিশনার নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, আমরা শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির মধ্যে কাজ করছি। নজিবুর রহমান এনবিআরের সব শৃংখলাকে ভূলুণ্ঠিত করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে গ্র“পিং আর বিভেদ উসকে দিয়েছেন। এক গ্র“পকে দিয়ে আরেক গ্র“পকে শায়েস্তা করছেন। এ অবস্থা অসহনীয়। যা রাজস্ব আদায়ের ওপর মারাÍক নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করছে। সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীই চেয়ারম্যানের অন্যায় আচরণ ও হয়রানিতে অতিষ্ঠ। এভাবে আতংক আর ক্ষোভ নিয়ে কারও পক্ষেই রাজস্ব আদায়ে মনোযোগী হওয়া সম্ভব নয়।

খবরের বাকি অংশ

বিসিএসের খুঁটিনাটি

মডেল: দীপ ও তাজিম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র টি এম মোশাররফ। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করে চাকরি খোঁজার পালা। ভালো চাকরির জন্য প্রস্তুটিটাও তো চাই। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শেষ হলেও বসে থাকার উপায় নেই। চলে চাকরির জন্য জোর প্রস্তুতি। পরীক্ষাও দেন বিভিন্ন ব্যাংকসহ নানা প্রতিষ্ঠানে। শেষ পর্যন্ত টিকে যান বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক হিসেবে। কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট নন। পেশার ক্ষেত্রে সরকারি চাকরিই তাঁর প্রথম পছন্দ। তাই চাকরির পাশাপাশি চলে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি। সবশেষে ২৭তম বিসিএস পরীক্ষায় বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারে চূড়ান্তভাবে টিকে যান। বর্তমানে তিনি ব্যবহারিক প্রশিক্ষণে রয়েছেন।
শুধু টি এম মোশাররফ নন, তাঁর মতো অনেকেই চাকরিজীবনের পছন্দের তালিকায় প্রথম রাখেন সরকারের প্রথম শ্রেণীর (ক্যাডার) চাকরি।
প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা: রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকার নানা ধরনের সিদ্ধান্ত নেয় প্রতিনিয়ত। যেকোনো নির্বাচিত সরকার রাষ্ট্রের প্রশাসক হিসেবে কাজ করে। আর তাদের নেওয়া নানা সিদ্ধান্ত ও কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের দায়িত্ব থাকে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। প্রশাসনের কেন্দ্র থেকে মাঠ পর্যায় সব ক্ষেত্রেই কাজ করতে হয় তাঁদের। উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, বিভিন্ন দপ্তর-অধিদপ্তর থেকে সচিবালয় পর্যন্ত কাজ করতে হয় এঁদের। দপ্তর ও পদভেদে এঁদের কাজের ধরনের মধ্যে পার্থক্য থাকলেও মূলত সবাই নিয়োজিত থাকেন জনসেবায়। এককথায় বলতে গেলে তাঁরা প্রজাতন্ত্রের সেবক।
ক্যাডার পরিচিতি: শুরুর দিকে সরকারি কাজের জন্য ৩০টি ভিন্ন ক্যাডার নিয়োগের বিধান ছিল। পরে বিসিএস প্রশাসন ও সচিবালয়কে একীভূত করা হয়। সর্বশেষ আরও একটি ক্যাডারকে বাদ দেওয়া হয় এবং একটির জন্য স্বাধীন কমিশন গঠন করা হয়েছে। পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ১৫টি সাধারণ ও ১২টি পেশাগত বা কারিগরি ক্যাডার রয়েছে। এসব ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নানা বিভাগে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। জনসেবা (পাবলিক সার্ভিসেস) সংশ্লিষ্ট কাজে প্রধান ভূমিকায় থাকেন মেধাবী কর্মকর্তারা।
বিসিএস কেন: প্রজাতন্ত্রের প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে জনসেবা করতে চাইলে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসেস (বিসিএস) পরীক্ষা দিয়ে আসতে হবে আপনাকে। সাংবিধানিকভাবে এর দায়িত্ব রয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের ওপর।
১৯৭৭ সালে সরকার বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিসেস অধ্যাদেশ জারি করে এবং বর্তমান বাংলাদেশ কর্মকমিশন (পিএসসি) গঠিত হয়। উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়ায় জনসেবার জন্য প্রার্থী বাছাই করাই হচ্ছে পিএসসির মূল কাজ। আর প্রতিযোগিতামূলক ওই প্রক্রিয়াটি বিসিএস পরীক্ষা নামে পরিচিত।
ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন বিসিএস পরীক্ষার আয়োজন করে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শূন্য ক্যাডার পদের বিবরণ সংস্থাপন মন্ত্রণালয়কে জানায়। সংস্থাপন মন্ত্রণালয় সেই পরিপ্রেক্ষিতে পিএসসিকে চাহিদাপত্র দেয়। পিএসসি ১৯৮২ বিধান মোতাবেক (সরাসরি নিয়োগের জন্য বয়স, যোগ্যতা ও পরীক্ষা) পরীক্ষা নিয়ে যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগের সুপারিশ করে।
পরীক্ষার তথ্য: এ পর্যন্ত ২৮টি বিসিএস পরীক্ষা চূড়ান্তভাবে শেষ হয়েছে। ২৮তম বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে ২৯তম লিখিত পরীক্ষার ফলও। এর মৌখিক পরীক্ষাও শিগগিরই শুরু হবে। ৩০ জুলাই ৩০তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা সারা দেশে একযোগে অনুষ্ঠিত হবে।
ক্যাডারগুলো: এ পরীক্ষায় ২৭টি ক্যাডারে মোট শূন্য পদ দুই হাজার ৫৭২টি। সাধারণ ক্যাডারের ৮৩১টি বাদে বাকিগুলো পেশাগত বা কারিগরি ক্যাডার। সাধারণ ক্যাডারগুলো হচ্ছে বিসিএস প্রশাসন, পররাষ্ট্র, পুলিশ, নিরীক্ষা ও হিসাব, আনসার, শুল্ক ও আবগারি, সমবায়, খাদ্য, পরিবার পরিকল্পনা, ডাক, রেলওয়ে পরিবহন ও বাণিজ্যিক, কর, বাণিজ্য, ইকোনমিক ও তথ্য। আর পেশাগত বা কারিগরি ক্যাডারের নামগুলো বিসিএস কৃষি, মৎস্য, খাদ্য, স্বাস্থ্য, তথ্য, সড়ক ও জনপথ, রেলওয়ে প্রকৌশল, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, গণপূর্ত, পরিসংখ্যান, পশুসম্পদ ও শিক্ষা।
পছন্দের তালিকা: বর্তমানে সরকারের একটি অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দায়িত্বে আছেন অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে বিসিএস পরীক্ষা দেন। প্রথমবার হয়ে যায় একটি ক্যাডারে। কিন্তু যোগ দেন না। কারণ তাঁর পছন্দ ছিল, তিনি প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেবেন। পরেরবার প্রশাসন ক্যাডারে হয়ে যায়। কোন ক্যাডারে যাবেন আপনি, সেটি নির্ভর করবে আপনার পছন্দের ওপরই। তবে সঙ্গে মিলতে হবে ফলাফল, কোটা, শূন্যপদ ইত্যাদি। কথা হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব বর্তমানে ফরেন একাডেমির অধ্যক্ষ মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে ১৯৮১ সালে বিসিএসে (পররাষ্ট্র) যোগ দেন। কেন এই ক্যাডারে এলেন? উত্তরে বলেন, ‘আমাকে তৎকালীন মৌখিক বোর্ডে এ প্রশ্ন করা হয়েছিল। আমি বলেছিলাম, আমার পৃথিবীটা ঘুরে বেড়ানোর খুব ইচ্ছা। কিন্তু পরিবারের সীমিত আর্থিক সামর্থ্যে তা সম্ভব নয়। তাই এই পররাষ্ট্র ক্যাডারে যেতে চাই।’
পছন্দের তালিকায় অনেকে রাখেন পুলিশ ক্যাডারকে। বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ও পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর হিসেবে কর্মরত নাইম আহমেদ। তিনি ১৯৮৪ সালে (বিসিএস ১৯৮২ সালের ব্যাচ) সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কেন পুলিশ ক্যাডার পছন্দ? উত্তরে নাইম আহমেদ বলেন, ‘পারিবারিকভাবে ছোটবেলা থেকেই ইউনিফর্ম চাকরির সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটে। কারণ আমার দুই ভাই ও এক ভগ্নিপতি সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতম কর্মকর্তা ছিলেন। আমারও জনসম্পৃক্ত কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতে ইচ্ছে ছিল ও পছন্দে ছিল সরকারি চাকরি। তাই বিসিএস পরীক্ষা দিই এবং আমার প্রথম পছন্দ পুলিশ ক্যাডারেই আমি টিকে যাই।’
চাহিদার প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারও। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আমি প্রশাসন ক্যাডার পছন্দ করেছিলাম মূলত নানা মানুষ ও নানা কাজের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারব চিন্তা করে। তা ছাড়া আমার মতে, প্রশাসন ক্যাডারদের সামাজিক মর্যাদা অন্য ক্যাডারের চেয়ে বেশিই মনে হয়। দেশের সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেশার সুযোগও পাওয়া যায় এর মাধ্যমে।’
সাধারণ ও পেশাগত বা কারিগরি কোনো ক্যাডারকে আসলে ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। পছন্দের তালিকায় বাদ যায় না সাধারণ ক্যাডারের বাণিজ্য, কর, নিরীক্ষা ও হিসাব এবং রেলওয়ে পরিবহন ও বাণিজ্যিক ক্যাডার। কারিগরি ক্যাডারে স্বাস্থ্য, খাদ্য, গণপূর্ত এবং শিক্ষকতা বেশির ভাগের নির্বাচনের তালিকার শীর্ষে থাকে। তবে যে ক্যাডারেই আপনি টেকেন, মনে রাখবেন, আপনি হতে যাচ্ছেন প্রজাতন্ত্রের প্রথম শ্রেণীর (ক্যাডার) কর্মকর্তা।
ক্যাডার নির্বাচনে আপনাকে অব্যশই নিজের পছন্দকে গুরুত্ব দিতে হবে। আর সেভাবেই প্রাথমিক আবেদনপত্রে তা লিখেছেন নিশ্চয়ই। মনে রাখতে হবে, আপনি আবেদনপত্রে যদি কোনো ক্যাডার পছন্দের তালিকায় না রাখেন, তবে তা আর পরে যোগ করতে পারবেন না।

খবরের বাকি অংশ

রাজস্ব বোর্ডের চারজন সদস্য সচিব হলেন


নিজস্ব প্রতিবেদক 
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ইতিহাসে এই প্রথম চারজন সদস্যকে একসঙ্গে সচিব পদমর্যাদায় পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এতদিন তারা অতিরিক্ত সচিব পদে ছিলেন। একই সঙ্গে তাদের বেতন কাঠামো গ্রেড-১-এ উন্নীত করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত ৩১ জুলাই বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা হচ্ছেন-এনবিআরের সিনিয়র সদস্য জাহান আরা সিদ্দিকী, মো. ফরিদ উদ্দিন, সৈয়দ মো. আমিনুল করিম ও মোহাম্মদ আলাউদ্দিন। 

 




ঢাকা, সোমবার, ০৪ আগস্ট ২০১৪, ২০

খবরের বাকি অংশ

শনিবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৫

সংযোগ স্বপ্নে শুভঙ্করের ফাঁকি

সংযোগ স্বপ্নে শুভঙ্করের ফাঁকিঢাকা-শিলং-গুয়াহাটি ও কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা বাস সার্ভিস চালু হওয়ায় ভারতই বেশি লাভবান হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ঢাকায় সামান্য যাত্রাবিরতিতে বাংলাদেশের লাভবান হওয়ার কিছু নেইসাখাওয়াত হোসেন ভারতের সঙ্গে উপ-আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি বা সংযোগের বিভিন্ন চুক্তি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি নতুন মাত্রা পাবে। সাংস্কৃতিক ও পর্যটনশিল্পের উন্মোচিত হবে নতুন দিগন্ত। এমনি নানা স্বপ্নে মোদি সরকার বাংলাদেশকে বিভোর রাখলেও কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এর পুরোটাই শুভঙ্করের ফাঁকি। সংযোগ বাস্তবায়নে দেশ সাময়িকভাবে কিছুটা লাভবান হলেও ভবিষ্যতে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির সম্মুখীন হবে। আর লাভের পুরোটাই ভারতের ঘরে উঠবে।
তাদের বক্তব্য, মোদির সফরের পর সংযোগ বা কানেক্টিভিটির সংজ্ঞাই পাল্টে গেছে। এখন যোগাযোগ বলতে বোঝানো হচ্ছে বহুমাত্রিক যোগাযোগ, যার মধ্যে থাকছে নৌ, রেল, সড়কসহ সব ধরনের যোগাযোগ। বাংলাদেশের মানুষ ট্রানজিটকে ভালোভাবে না নেয়ায় কৌশলী ভারত এর খোলস পাল্টে 'কানেক্টিভিটি' নামে উপস্থাপন করছে।

এ ব্যাপারে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেন, 'যথাযথ মাশুল দিয়ে ভারত বাংলাদেশের সড়ক, রেল, বন্দরসহ সবকিছু ব্যবহার করুক। এতে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু এসব বিষয় তো পরিষ্কার হচ্ছে না।'
ঢাকা-শিলং-গুয়াহাটি ও কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা বাস সার্ভিস চালু হওয়ায় ভারতই বেশি লাভবান হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ঢাকায় সামান্য যাত্রাবিরতিতে বাংলাদেশের লাভবান হওয়ার কিছু নেই। বরং এর মাধ্যমে ভৌগোলিকভাবে দূরবর্তী ও দুর্গম উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে বৃহদংশের যোগাযোগ সহজ হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, কলকাতার সঙ্গে আগরতলার যোগাযোগে বাণিজ্যিক লাভ ওই দেশটিরই বেশি, বিশেষ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকরা যোগাযোগ ও বাণিজ্য-সুবিধা পাবে। তার দাবি, ঢাকা-শিলং-গুয়াহাটি বাস সার্ভিস চালুর ফলে মূলত ভারতের নাগরিকরা উপকৃত হলেও এ থেকে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সুবিধা একেবারেই ছোটখাটো।
এদিকে, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে ২০০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা বিষয়ে যে (নিউ লাইন অব ক্রেডিট_ এলওসি) সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে, তাতে এই ঋণের মূল সমস্যা সুদের হার নয়। এর চেয়ে বড় সমস্যা প্রকল্পের রসদ, প্রযুক্তি এবং দক্ষ জনশক্তির উৎস শর্তায়িত থাকা বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন। তাদের ভাষ্য, এর ফলে ভারত প্রায় একক সরবরাহকারী হয়ে যায়। বাংলাদেশ প্রতিযোগিতামূলক সুলভমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন জানান, 'ইট-বালু-সিমেন্ট ভারত থেকে আনার প্রয়োজন নেই। আমরা যেটা উৎপাদন করি না বা চীন থেকে আমদানি করি, এমন পণ্য ভারত থেকে আনার নিশ্চয়তা দিতে পারি।'
২০০ কোটি ডলার অনুদান হিসেবে রূপান্তরিত করে বহুপক্ষীয় যোগাযোগের জন্য অনুদান হিসেবে দেয়াটাই উত্তম বলে মনে করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ২০ কোটি ডলার পদ্মা সেতুতে অনুদান দেয়া ছাড়া বাকি ঋণের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, সংযোগ বা কানেক্টিভিটি চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সড়কপথ-রেলপথ-নৌপথ সংস্কারের নামে অবকাঠামো উন্নয়নের ধোয়া তুলে যে নির্মাণসামগ্রী, মালপত্র এবং ঠিকাদার-পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়া হবে, তার সবকিছু ভারত থেকে ক্রয়-নিয়োগের শর্ত বেঁধে দিয়ে ঋণের পুরো টাকাটাই ভারত নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। সেই সঙ্গে এরই মাধ্যমে ভারতের প্রাইভেট সেক্টরের প্রভূত লাভ করা এবং সেখান থেকে কর-ট্যাক্স আদায় করে ভারতের অর্থ-মন্ত্রণালয়ের আরো অনেক অর্থ সমাগম নিশ্চিত করবে।
দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও কূটনীতিকদের মতে, যোগাযোগ খাতে বাংলাদেশের লাভবান হওয়ার বিষয়টি অনেকাংশে নির্ভর করছে আমাদের দরকষাকষির সক্ষমতার ওপর। চুক্তি অনুযায়ী যাত্রী ও পণ্যবাহী যান পরিবহনের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলো মাশুল পাবে। অবশ্য সেই মাশুলের পরিমাণ কী হবে, তা এখনই নির্ধারণ করা উচিত এবং এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সুবিধা লাভের প্রতি বাংলাদেশকে মনোযোগী হতে হবে।
একইভাবে উত্তর-পূর্ব ভারতে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে ভারত বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীল। তবে এর মাশুল আদায়ের ক্ষেত্রে পরিবহন ব্যয় ছাড়াও অবকাঠামো ও পরিবেশগত ক্ষতির বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। অন্যদিকে ভারতের একাংশ থেকে অপরাংশে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে তাদের যে আর্থিক সাশ্রয় হবে, তার একটি অংশও বাংলাদেশ পাওয়ার দাবি রাখে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, ট্রানজিট, ট্রান্সশিপমেন্ট বা কানেক্টিভিটি বা সংযোগের সুবিধা যাতে এ অঞ্চলের সব দেশ ও সব মানুষ সমভাবে পায়, সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোকেই। বাংলাদেশের সড়ক, সমুদ্র, রেল ও নৌপথে অন্য দেশের যানবাহন যে শর্তে চলাচল করবে, সেই শর্তে অন্য দেশেও বাংলাদেশের যানবাহনের চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়াতে সই হওয়া চুক্তিগুলোয় অনেক শর্ত এখনো স্পষ্ট নয়। সরকারের উচিত হবে বিষয়গুলো পরিষ্কার করা এবং চুক্তি বাস্তবায়নে যথাসম্ভব দ্রুত কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা। তাদের ভাষ্য, বাংলাদেশের রাস্তাঘাটসহ অন্যান্য অবকাঠামোর যে অবস্থা, তা দ্রুত উন্নয়ন না হলে এসব চুক্তি হয়েও কোনো লাভ হবে না। 
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'আমাদের অবকাঠামো এখনো প্রস্তুত নয়। এর জন্য আমাদের বিনিয়োগ করতে হবে।'
ভারত যে ঋণ দিচ্ছে বাংলাদেশকে, তার একটা বড় অংশ মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দরের অবকাঠামো ও সংযোগ সড়ক সংস্কারে ব্যয় করতে হবে উল্লেখ করে ড. রহমান বলেন, 'এগুলো আমাদের খুব দ্রুততার সঙ্গে করতে হবে। নইলে আমাদের রাস্তাঘাটের যে অবস্থা, তাতে এই যোগাযোগ ব্যবস্থা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব না।' 
অন্যদিকে, নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, কানেক্টিভিটি চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যসমূহ বা সেভেন সিস্টার্সে চলমান বিচ্ছন্নতাবাদী বিদ্রোহ দমনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে সহজে ও স্বল্পতম সময়ের মধ্যে অস্ত্র ও সেনাবাহিনী পরিবহন করে সেখানে পৌঁছানোর ক্ষমতা অর্জন এবং বিদ্রোহ দমনে অনেক বাধা অতিক্রম করে কয়েক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। 
এছাড়া অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে চীনের সঙ্গে বিবদমান সংঘর্ষের ক্ষেত্রে কানেক্টিভিটির মাধ্যমে ভারত প্রতিরক্ষা জোরদার করতে সমর্থ হলো এবং বেইজিংকে দিল্লী এ বার্তা পৌঁছে দিল যে, চীনের বিরুদ্ধে সংঘাতে ভারত নিজের জন্য আঞ্চলিক মিত্র (বাংলাদেশ) জোগাড় করতে সমর্থ হয়েছে।
কানেক্টিভিটি বা সংযোগ চুক্তি বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশ-চীন সুসম্পর্ক নষ্ট করে ভারত বাংলাদেশের সামরিক নিরাপত্তাকে ধ্বংস করবে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় সহজেই আঞ্চলিক প্রাধান্য বিস্তার করতে সমর্থ হবে বলেও মনে করেন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
অন্যদিকে যোগাযোগ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বাংলাদেশের অনুন্নত ও দুর্বল পরিবহন অবকাঠামোর ওপর দিয়ে ভারতের ভারী পরিবহন যানের অবাধ যাতায়াতের মাধ্যমে পরিবহন কাঠামোর অপরিসীম ক্ষতিসাধন এবং এসব কাঠামোর স্থায়িত্ব অনেক গুণে কমিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের পরিবহন ব্যবস্থাকে আরো বেশি সমস্যাযুক্ত ও বিপদসঙ্কুল করে তুলবে কানেক্টিভিটি চুক্তি।
এদিকে, কোস্টাল শিপিং বা উপকূলীয় পরিবহন বাংলাদেশের জন্য কতটা লাভবান হবে তা নিয়েও সংশ্লিষ্টরা যথেষ্ট সন্দিহান। তাদের ভাষ্য, এই চুক্তি কার্যকর হলে উভয় দেশের আমদানি ও রপ্তানি পণ্যের পরিবহন ব্যয় কমবে। কিন্তু চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের যে সুবিধা দেয়া হবে, তার বিনিময়ে বাংলাদেশ কী পরিমাণ মাশুল পাবে, সেটি স্পষ্ট করা হয়নি চুক্তিতে। 
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, কানেক্টিভিটি বাড়াতে ভারতের সঙ্গে সই হওয়া চুক্তিগুলোয় অনেক শর্ত এখনো অস্পষ্ট। সরকারের উচিত হবে শর্তগুলো পরিষ্কার করে চুক্তি বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়া। 
অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমান বলেন, কানেক্টিভিটির মাধ্যমে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে কতটা উপকৃত হচ্ছে বা ভবিষ্যতে হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে।
তিনি মনে করেন, দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা এবং এ সংক্রান্ত আলোচনার ক্ষেত্রে কিছুটা অস্পষ্টতা রয়েছে। যার একটি মূল কারণ হিসেবে তিনি দেখেন, সংসদ যথেষ্ট কার্যকর না থাকা।
'সংসদ এখানে কার্যকর না থাকার ফলে আমাদের সঙ্গে কি চুক্তি হচ্ছে এবং আমরা কি পাচ্ছি বা দিচ্ছি, তা নিয়ে সংসদে আলোচনা হচ্ছে না, এটি একটি অস্পষ্টতা। অপরদিকে ভারত বাংলাদেশকে সমমর্যাদার দৃষ্টিতে দেখে কি না, তা নিয়ে আমি সন্দিহান।' ভারতের আমলাতন্ত্র অনেক শক্তিশালী এবং এর আগেও দেখা গেছে তারা বাংলাদেশকে সমমর্যাদার দৃষ্টিতে দেখে না।' সমমর্যাদা নিশ্চিত করার জন্য দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান আরো শক্তিশালী করতে হবে বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক রেহমান।
ভারতের অতীত আচরণের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে কূটনীতিকরা বলেন, গঙ্গা নদীতে ফারাক্কা বাঁধ চালু করার সময় ভারত নানা সুযোগ-সুবিধার কথা তুলে ধরেছিল। ১৯৭৫ সালের চুক্তি অনুযায়ী ২১ এপ্রিল থেকে ৩১ মে (১৯৭৫) পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে ফারাক্কার ক্যানেল চালু করার চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। কিন্তু এর মধ্যে তারা এই বাঁধ নিয়ে আর কোনো কথাও বলেনি এবং ১ জুন ১৯৭৫ থেকেই ফিডার ক্যানেল বন্ধ করেনি। তবে ফারাক্কার পানি প্রত্যাহার শুরু করে। এ সময় বঙ্গবন্ধুর সরকারও অত্যাধিক ভারতনির্ভরতার কারণে এর কোনো প্রতিবাদ করতে পারেনি। পরে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সরকার ১৯৭৬ সাল থেকে অভিন্ন নদী গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে আন্তর্জাতিকভাবে জনমত গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। সে উদ্যোগে আন্তর্জাতিক জনমত বাংলাদেশের অনুকূলে এনে ১৯৭৭ সালে ফারাক্কা ইস্যুটি জাতিসংঘে উত্থাপন করেন। ওই সময় অনন্যোপায় হয়ে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে উভয় দেশের স্বার্থানুকূল একটি সম্মানজনক চুক্তি স্বাক্ষর করে। সে চুক্তির গ্যারান্টি ক্লজ ছিল, কোনো পক্ষ চুক্তির ধারা লঙ্ঘন করলে অপর পক্ষ তৃতীয় কোনো মধ্যস্থতাকারীর দ্বারস্থ হতে পারবে। তিন বছরের জন্যও ওই চুক্তি সম্পাদিত হলেও জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর ভারত একতরফাভাবে গঙ্গায় পানি প্রত্যাহার শুরু করে।
আওয়ামী লীগ শাসনামলে ১৯৯৬ সালে সরকার ভারতের সঙ্গে ৩০ বছরমেয়াদি একটি পানিচুক্তি স্বাক্ষর করে। অর্থাৎ সে চুক্তিতে গ্যারান্টি ক্লজ তুলে দেয়া হয়। ফলে চুক্তিবলে বাংলাদেশে যেটুকু পানি পাওয়ার কথা, ভারত তা না দেয়ায় বাংলাদেশের পক্ষে তৃতীয় কোনো শক্তির দ্বারস্থ হওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। এ কারণে ১৯৯৬ সালের চুক্তির পরও বাংলাদেশ চুক্তি মোতাবেক কখনো পানি পায়নি। ভারত খামখেয়ালিমতো গঙ্গার পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। এবারো শুষ্ক মৌসুমে ভারত বাংলাদেশকে চুক্তির চেয়ে ৮৩ হাজার কিউসেক পানি কম দিয়েছে। 
কূটনীতিকদের ভাষ্য, এবারো বাংলাদেশের ভাগ্যে এমনটি ঘটবে কি না, এখন শুধু তা-ই দেখার অপেক্ষা। 
মঙ্গলবার, জুন ২৩, ২০১৫http://www.jjdin.com

খবরের বাকি অংশ

জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় কূটনীতিকরা উদ্বিগ্ন

বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় হঠাৎ করেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। গুলশানে কূটনৈতিক এলাকার নিরাপত্তার মধ্যেই ইতালির নাগরিককে গুলি করে হত্যার ঘটনা এই উদ্বেগকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। জঙ্গি হামলার ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রেলিয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও কানাডা নিজ নিজ দেশের নাগরিকদের সতর্কতার সাথে চলাফেরার পরামর্শ দিয়েছে।
এ দিকে ইতালির নাগরিক হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ঘটনার দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও ব্রিটেন।
বাংলাদেশসহ দণি এশিয়ার দেশগুলোতে মার্কিন স্বার্থের ওপর জঙ্গি হামলার সম্ভাব্য পরিকল্পনার তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তাদের নাগরিকদের সতর্ক করেছে। অস্ট্রেলিয়া ও ব্রিটেনের পর যুক্তরাষ্ট্রের প থেকে এই সতর্ক বার্তা এলো। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস হালনাগাদ করা এক বার্তায় বলেছে, বাংলাদেশে জঙ্গিরা অস্ট্রেলিয়ার স্বার্থে আঘাত হানতে পারে বলে নির্ভরযোগ্য নতুন তথ্য পাওয়া গেছে। এ ধরনের হামলা হলে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের নাগরিকেরাও তিগ্রস্থ হতে পারেন।
বার্তায় বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র সরকার যেসব নতুন তথ্য পাচ্ছে তাতে ধারণা করা যায়, দণি এশিয়ার জঙ্গি দলগুলো এই অঞ্চলে মার্কিন স্থাপনা, মার্কিন নাগরিক ও মার্কিন স্বার্থের ওপর হামলার পরিকল্পনা করে থাকতে পারে। ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে তাদের আঞ্চলিক নিরাপত্তা দফতরের অনুমতি ছাড়া বাংলাদেশে বড় ধরনের জমায়েত বা আন্তর্জাতিক হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (যেখানে বিদেশীরা সমবেত হতে পারে) অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্রের অন্য নাগরিকদেরও একই পরামর্শ দিয়ে রেস্তোরাঁ, হোটেলসহ সব জনসমাগমস্থলে চলাফেরার েেত্র ‘উচ্চমাত্রায় সতর্কতা’ অবলম্বন করতে বলেছে মার্কিন দূতাবাস।
নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা জানিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দল গত শনিবার বাংলাদেশ সফর পিছিয়ে দিলে হঠাৎ করেই জঙ্গি হামলার প্রসঙ্গটি সামনে আসে। তার আগের দিন অস্ট্রেলিয়ার ডিপার্টমেন্ট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেড (ডিএফএটি) বাংলাদেশে ভ্রমণ বিষয়ে সতর্কতা জারি করে এক বার্তায় তাদের নাগরিকদের জানায়, জঙ্গিরা বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ার স্বার্থের ওপর আঘাত হানার পরিকল্পনা করছে- এমন নির্ভরযোগ্য তথ্য তাদের হাতে রয়েছে। 
এরপর ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তা প্রধান শন ক্যারল নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও পরিকল্পনা খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশে আসেন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাথে বৈঠক করেন। তাকে আশ্বস্ত করে সরকারের প থেকে বলা হয়, জঙ্গি হামলার আশঙ্কার বিষয়টি ভিত্তিহীন, বাংলাদেশে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটাররা পূর্ণ নিরাপত্তা পাবে। 
অস্ট্রেলিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ব্রিটেনও বাংলাদেশে তাদের নাগরিকদের চলাফেরা সীমিত করে আনার পরামর্শ দেয়। ব্রিটেন বলেছে, জঙ্গিদের কাছ থেকে হুমকি রয়েছে। সেপ্টেম্বরের শেষদিকে বাংলাদেশে পশ্চিমা স্বার্থের ওপর জঙ্গিদের আঘাত হানার পরিকল্পনার নির্ভরযোগ্য তথ্য রয়েছে। 
এরই মধ্যে গত সোমবার সন্ধ্যায় গুলশানে তাভেলা সিজার নামে এক ইতালীয় নাগরিককে গুলি করে হত্যা করা হয়। ইসলামিক স্টেট (আইএস) ওই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে বলে রাতেই তথ্য দেয় সাইট ইন্টিলিজেন্স গ্রুপ নামের একটি ওয়েবসাইট, যারা জঙ্গি হুমকি পর্যবেণ করে থাকে। তবে গতকাল মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গুলশানে ইতালির নাগরিক হত্যাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
জঙ্গিবাদ ইস্যুতে পশ্চিমা দেশগুলোর আকস্মিক উদ্বেগ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘আমার মনে হয় না সাম্প্রতিককালে হঠাৎ করে বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে বিরাট কোনো পরিবর্তন হয়েছে। জঙ্গিবাদ সমস্যা পৃথিবীর সব দেশেই কম বেশি রয়েছে। বাংলাদেশেও আছে। সরকার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘পশ্চিমা দেশগুলো নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করেই সাধারণত এক সুরে কথা বলে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মতপার্থক্য থাকে। পশ্চিমাদের কথা বলার একটি ধরন তো অবশ্যই রয়েছে। তবে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ নিয়ে পশ্চিমাদের এক সুরে কথা বলার কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ খুঁজে পাই না।’
ভারতে নিযুক্ত সাবেক হাইকমিশনার লিয়াকত আলী বলেন, ‘নতুন কোনো কিছুতো হয়নি যার জন্য পশ্চিমারা বাংলাদেশে জঙ্গি হামলা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছে। পশ্চিমাদের উদ্বেগের কারণটা আমার কাছে পরিষ্কার না।’
বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সময়ে সময়ে মানুষজন গ্রেফতার করে বিভিন্ন জঙ্গিবাদী গ্রুপের সাথে তাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ আনে। ব্লগার হত্যাকারীদের সাথেও জঙ্গিবাদী গ্রুপের সম্পৃক্ততার কথা বলা হয়। এগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমারা জঙ্গি হামলার আশঙ্কা করছে কি নাÑ জানতে চাওয়া হলে লিয়াকত আলী বলেন, ‘এটা বলা কঠিন। পশ্চিমাদের কাছে বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ নিয়ে বাড়তি কোনো তথ্য রয়েছে কি না তা আমরা জানি না। আর কিছুদিন অপেক্ষা করলে বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে। তারা কিছু না কিছু বলবে। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের নিরাপত্তা দল ঢাকা ঘুরে গিয়ে কি প্রতিবেদন দেয় তা-ও দেখার বিষয়।’

ইইউ’র নিন্দা : ইতালির নাগরিক তাভেলা সিজার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়েদুন। সিজারের পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ও সহকর্মীদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, সিজার বাংলাদেশে এসেছিলেন হতদরিদ্রদের সাহায্য করতে, যা তার এ হত্যাকাণ্ডকে আরো বেশি লোমহর্ষক করে তুলেছে। এ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে ইইউ রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে দ্রুত এ বর্বরোচিত হামলার তদন্ত এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রদূতের সাথে ইইউ ডেলিগেশনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ এবং নিহতের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন।
ব্রিটেনের নিন্দা : তাভেলা সিজার হত্যার ঘটনাকে ‘কাপুরুষোচিত এবং ভীতিকর’ আখ্যা দিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। 
গতকাল এক বিবৃতিতে হাইকমিশনার বলেন, নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আইসিসিও-বিডির প্রকল্প ব্যবস্থাপক তাভেলা সিজার হত্যা একটি কাপুরুষোচিত ঘটনা। একজন স্বেচ্ছাসেবকের ওপর এমন হামলার ঘটনা সত্যিই ভীতিকর। 
ব্রিটিশ দূত নিহতের শোকাহত পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতজনদের প্রতি সমবেদনা জানান। 
যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতি : ঢাকায় ইতালির নাগরিককে হত্যা এবং অব্যাহত হুমকি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর। উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক অংশীদার মনে করে বলে গতকাল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক বিবৃতিতে বলা হয়।
ঢাকায় ইতালির নাগরিক হত্যা সম্পর্কে অবগত থাকার কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর বলেছে, নিহতের পরিবার ও বন্ধু-বান্ধব এবং ইতালির প্রতি আমরা গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।
ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিবের সাথে ইইউ রাষ্ট্রদূতের বৈঠক : ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব খুরশেদ আলমের সাথে গতকাল দুপুরে বৈঠক করেছেন ইইউ রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়েদুন। 
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে খুরশেদ আলম বলেন, কূটনৈতিক এলাকার নিরাপত্তা তিন গুণ বাড়ানো হয়েছে। পুলিশ, আনসারসহ সাদা পোশাকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে। এ ছাড়া মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। 
তিনি বলেন, ইইউর রাষ্ট্রদূতের বৈঠকটি ছিল পূর্বনির্ধারিত। তার সাথে তাভেলা সিজার হত্যা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। হত্যার আগে তাভেলাকে কেউ অনুসরণ করছিল। হতে পারে হত্যাকারীরা তাকে চিনতো। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বিদেশী নাগরিক হত্যার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনার তদন্তে ঢাকা মহানগর পুলিশ, গোয়েন্দা বিভাগ ও র‌্যাব - এই তিন বাহিনীর পৃথক তিনটি তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে।কূটনৈতিক প্রতিবেদক
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫,বুধবার, ০০:০০
- See more at: http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/57701#sthash.wyiPFKha.dpuf

খবরের বাকি অংশ

বাংলাদেশ নিয়ে পশ্চিমা ষড়যন্ত্র!



বাংলাদেশকে নিয়ে পশ্চিমা কয়েকটি দেশের অহেতুক কিছু কর্মকাণ্ডে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এরই অংশ হিসেবে স্থগিত হয়েছে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর। সম্প্রতি জাপান ও ইতালির দু’জন নাগরিক খুন হওয়ার পর পশ্চিমারা বাংলাদেশে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে সতর্কতা জারি করে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। কিন্তু এরপরও পশ্চিমা কয়েকটি দেশ এখনও বহাল রেখেছে তাদের সতর্কবার্তা। পাশাপাশি অহেতুক স্থগিত করা হচ্ছে একের পর এক পূর্বনির্ধারিত বিভিন্ন কর্মসূচি ও সফর। যা বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে তেমন কোনো মিল নেই। তাদের এ কর্মকাণ্ড আর কিছুদিন বহাল থাকলে সরকার তথা দেশের ভাবমূর্তির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে আশংকা বিশেষজ্ঞদের।
২৫ সেপ্টেম্বরের আগে বাংলাদেশে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী অস্ট্রেলিয়া ও পশ্চিমা স্বার্থসংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে হামলার পরিকল্পনা করছে বলে একটি হুমকির তথ্য অস্ট্রেলিয়াকে দিয়েছে যুক্তরাজ্য। তারপর অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর স্থগিত হয়ে যায়। তারপর ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হুগো শোয়ারে তার সফর স্থগিত করেন। হুমকির আশংকায় বাতিল হয় অস্ট্রেলিয়ার একটি কনসার্ট। স্থগিত করা হয়েছে বাংলাদেশী পণ্যের ক্রেতাদের নিয়ে পূর্বনির্ধারিত ‘বায়ার ফোরাম’ বৈঠক এবং স্পেনের জাতীয় দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে জাপান ‘স্টাডি ইন জাপান’ বিষয়ক পূর্বনির্ধারিত একটি সেমিনার স্থগিত করার ঘোষণা দিয়ে বলেছে, এ অনুষ্ঠান পরবর্তীকালে অনুষ্ঠিত হবে। একটি জার্মান গবেষক দলের পূর্বনির্ধারিত সফর বাতিল করা হয়েছে। তাদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা ছিল।
এছাড়া নিরাপত্তার অজুহাতে নির্মাণাধীন তিন বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৪১ বিদেশী কর্মী প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। এসব বিদেশীর মধ্যে স্পেন, বুলগেরিয়া, আর্জেন্টিনাসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিক রয়েছেন। তারা স্পেনের আইসোলাক্স কোম্পানির অধীনে কাজ করতেন। দুই বিদেশী হত্যাকাণ্ডের পর আইএসের দায় স্বীকারের কারণে আইসোলাক্স তাদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে বলে জানা গেছে। ৫ অক্টোবর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বিদেশীদের প্রত্যাহারের কথা জানায়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২ দিনে এ ৪১ বিদেশীকে প্রকল্প এলাকা থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তাদের কয়েকজন ইতিমধ্যেই দেশ ছেড়েছেন। জানা গেছে, ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানির (ইজিসিবি) নির্মিতব্য সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) ৩৩৫ মেগাওয়াটের কেন্দ্র থেকে ৩৮ জন, নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির খুলনা ১৫০ মেগাওয়াট প্রকল্প একজন এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বিবিয়ানা (হবিগঞ্জ) ৪০০ মেগাওয়াটের প্রকল্প থেকে দু’জনকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
যদিও জার্মানি, চীন ও সৌদি আরব এমন পরিস্থিতির মধ্যেও ঢাকায় তাদের জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠান করেছে। হোটেলে পশ্চিমাদের সমাগমস্থল পরিহারে নিরাপত্তা সতর্কবার্তা জারি করেও কূটনীতিকরা নিজেরা বিভিন্ন হোটেলে ওইসব অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের মানুষ রাজনীতি সচেতন। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ দুটি বড় ধরনের রাজনৈতিক আন্দোলন প্রত্যেক্ষ করেছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ঘিরে অনেকগুলো আন্দোলন হয়েছে। তারপর ওই নির্বাচনের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় ৩ মাস লাগাতার অবরোধ হয়েছে। এ দুটি আন্দোলনে সহিংস পরিস্থিতির উদ্ভব হলেও এ দেশে বিদেশীরা কখনও টার্গেট হননি। ওই সময় ভারতের ক্রিকেট দল বাংলাদেশ সফর করেছে। তদানীন্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা সারা দেশের ৬৪ জেলা সফর করেছেন। এসব সফরে তার নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি হয়নি।
নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে কিছু দেশ ‘অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া’ দেখাচ্ছে বলে মনে করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। এ পরিস্থিতিতে প্রয়োজন হলে আবারও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কূটনীতিকদের সঙ্গে ডেকে কথা বলবেন বলে জানান তিনি।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশ ভ্রমণে কোনো দেশের রেড অ্যালার্ট নেই। বেশ কিছু দেশ বাংলাদেশ ভ্রমণে সাধারণ সতর্কবার্তা দিয়েছে। এতে করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তির কোনো সংকট হবে না। এটা কোনো সংকট নয়। এটা একটা সাময়িক সমস্যা।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সময়েও কোনো কোনো দেশ এমন সাবধানতা অবলম্বন করেছিল। অস্ট্রেলিয়ার ভ্রমণ সতর্কতা শুধু বাংলাদেশে নয়। বরং আরও অনেক দেশে তারা এমন ভ্রমণ সতর্কতা জারি করে রাখে।
সরকারের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যাখ্যা করেছেন। দুই মন্ত্রী সরকারের গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থার উল্লেখ করেন। তারপর বুধবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রদূত রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এদিকে, বৃহস্পতিবার স্পেন ও ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানা গেছে।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হেমায়েত উদ্দিন দুই বিদেশী নাগরিক হত্যার পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা নিয়ে সরকারের আশ্বাসের পর কিছু দেশের বাড়াবাড়ি রকমের প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত নয় বলে মনে করেন। তিনি বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, ‘দুই বিদেশী হত্যার ঘটনায় নিন্দা জানাই। এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে তার জন্যে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া উচিত। কিন্তু আজকের পৃথিবীতে এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই পারে। সেই ক্ষেত্রে বিদেশী দূতাবাসগুলো তাদের নাগরিকদের সাবধানে চলতে বলতে পারে। তাই বলে এমন অবস্থা সৃষ্টি করা ঠিক না যে অবস্থা বাংলাদেশে নেই। বহু দেশে সহিংসতা, বোমাবাজি হচ্ছে, বিদেশী নাগরিক মারা যাচ্ছেন। আমাদের দেশে এমন হয়নি। এখন সরকার যখন বিদেশীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছে, তখন বিদেশীদের আর কোনো কথা থাকে না। পৃথিবীতে এমন কোনো জায়গা কি আছে যে, বিদেশীদের ১০০ শতাংশ নিরাপত্তা দিতে পারে?’
তিনি আরও বলেন, ‘জাপানি নাগরিকের কথাই ধরেন, ওই লোকটা রংপুরে মুসলমান হয়ে এক বছর ধরে রুম ভাড়া করে থাকেন। সেই তথ্যটা কি দূতাবাস বাংলাদেশ সরকারের কাছে দিয়েছে যে তার ব্যাপারে দেখভাল করা দরকার। তাদেরও তো একটা দায়িত্ব আছে। এখন দুটি ঘটনা নিয়ে বিদেশী দূতাবাসগুলোর ওভার প্লে করলে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী উৎসাহিত হবে। বিদেশী দূতাবাসগুলোর উচিত হবে সরকারকে কোনো পরামর্শ থাকলে তা দিয়ে সহায়তা করা।’
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বর্তমান পরিস্থিতিতে কয়েকটি দেশ অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে বলে মনে করেন। তিনি বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেছেন, ‘এটা দুঃখজনক যে, বাংলাদেশে দু’জন বিদেশী নাগরিক খুন হয়েছেন। আমরা এ ধরনের ঘটনা চাই না। বাংলাদেশে বিদেশীদের সম্মান দেখানোর সুনাম আছে। তবে এমন নয় যে, পৃথিবীতে এমন ঘটনা একেবারেই ঘটে না। ফলে এ নিয়ে এতটা শক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত নয়। পশ্চিমারা তাদের নাগরিকদের ব্যাপারে খুবই সচেতন। সেদিক থেকে তাদের উদ্বেগ থাকাটা দোষের নয়। তার মানে এই নয় যে, তারা কর্মসূচি বাতিল করে দেবে, ক্রিকেট দলের সফর স্থগিত করবে। উচ্চমাত্রার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরও কারও কি সাধ্য আছে যে, ক্রিকেট দলের ক্ষতি করবে?’
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে জিএসপি সুবিধা নিয়েও বাংলাদেশ বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছে। রানা প্লাজা ধসের পর দেশটি বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে। তারপর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে একটি অ্যাকশন প্ল্যান দিয়েছিল। ওই অ্যাকশন প্ল্যানের মধ্যে যেসব শর্ত ছিল তার সবই বাংলাদেশ পূরণ করেছে। কিন্তু এখন জিএসপি সুবিধা বাস্তবায়ন করেনি যুক্তরাষ্ট্র। বরং নতুন করে ‘ট্রান্স প্যাসিপিক পার্টনারশিপ’ (টিপিপি) নামের একটি বহুজাতিক চুক্তি সম্পাদন করে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে নতুন এক অসম প্রতিযোগিতার মুখোমুখি করেছে। টিপিপির আওতায় প্রশান্ত মহাসাগরের তীরবর্তী যে ১২টি দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে তার মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানিতে প্রায় ১৬ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। তার বিপরীতে ভিয়েতনাম শূন্য শুল্কে পণ্য রফতানি করলে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে বলে আশংকা করা হচ্ছে। আফ্রিকা ও সাব সাহারার দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রে আগেই শুল্কমুক্ত পণ্য রফতানির সুযোগ লাভ করেছে। এখন টিপিপি পোশাক শিল্পের জন্য নতুন এক সংকটের সৃষ্টি করবে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে অবশ্য পশ্চিমাদের বিপরীত অবস্থানও আছে চীন ও রাশিয়া। তারা এখনও পর্যন্ত কোনো সতর্কবার্তা দেয়নি। চীনের রাষ্ট্রদূত ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে যে, নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সতর্কবার্তা দেয়ার মতো অবস্থানে নেই তার দেশ। আরব দেশগুলোও পশ্চিমাদের সঙ্গে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগে যোগ দেয়নি। জার্মানির অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়নমন্ত্রী ড. জেরার্ড মুলার ৫ থেকে ৭ অক্টোবর ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে বাংলাদেশ সফর করেছেন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের একটি প্রতিনিধি দল সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে বলেছে যে, বিদেশীদের জন্য বাংলাদেশ খুবই নিরাপদ। জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট দল বাংলাদেশ সফরে আসবে বলে জানিয়েছে। কেননা জিম্বাবুয়ে শুধু ক্রিকেট খেলতে আসবে, দেশটি ওই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত নয়।
আরব দেশগুলোর অবস্থান ব্যাখ্যা করে মিসরের রাষ্ট্রদূত মাহমুদ ইজ্জাত বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের পর আমরা আশ্বস্ত হয়েছি যে, দুই বিদেশী হত্যার সঙ্গে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কোনো যোগসূত্র নেই। আমাদের মনে হয়, এটি সামাজিক অপরাধ কিংবা এখানকার রাজনৈতিক কারণে হয়ে থাকতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর আমরা এ ব্যাপারে এমনটাই অনেক বেশি আশ্বস্ত হয়েছি।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে বিদেশী হত্যার ঘটনা তেমন না ঘটলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিদেশী হত্যার ঘটনা একেবারে নজিরবিহিন কোনো ঘটনা নয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় গত ৬ মাসে ২৯ জন বাংলাদেশী খুন হলেও সেগুলোর তদন্তে কোনো কিনারা করতে পারেনি ওই দেশের পুলিশ। নিহত বাংলাদেশীদের বেশিরভাগই প্রবাসী ব্যবসায়ী। নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে লুট হয়েছে তাদের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও সম্প্রতি দু’জন বাংলাদেশী খুন হয়েছেন।
09 Oct, 2015

খবরের বাকি অংশ

বাংলাদেশ বিষয়ে বিদেশিদের নাক গলানোর সুযোগ না দেয়াই ভালো

স্টাফ রিপোর্টার : বিদেশী মিশনগুলোকে অযথা গুরুত্ব দেবার প্রয়োজন নেই। সেই সাথে বিদেশীদের কাছে আগ বাড়িয়ে কোন প্রশ্ন করে তাদেরকে বাংলাদেশ বিষয়ে নাক গলানোর সুযোগ না দেবার কথা বলেছেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এবং ফরেন সার্ভিস একাডেমীর সাবেক প্রিন্সিপাল তৌহিদ হোসেন। গতকাল কূটনীতি বিষয়ক রিপোর্টিং-এর উপর একদিনের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বক্তব্য দানকালে তিনি সাংবাদিকদের এ আহবান জানান। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি এ কর্মশালার আয়োজন করে। কর্মশালায় বিভিন্ন সেশনে বক্তব্য রাখেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতিসংঘ উইংয়ের ডিজি মোস্তাফিজুর রহমান এবং সিনিয়র সাংবাদিক ফরিদ হোসেন। তারা কূটনৈতিক রিপোর্টিং-এর বিভিন্ন বিষয়াদি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং রাজনীতির উপর আলোকপাত করেন। - 
http://www.dailyinqilab.com
| প্রকাশের সময় : ২০১৫-০৮-২২


খবরের বাকি অংশ

সোমবার, ২ নভেম্বর, ২০১৫

নিরাপত্তা ইস্যূতে প্রয়োজন জাতীয় ঐকমত্য সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন


দুই বিদেশী হত্যাসহ সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দলের সফরের আগে ঘটনার সূত্রপাত। পূর্বাপর বিশ্লেষণ করলে এসব ঘটনার মধ্যে পারস্পরিক যোগসূত্র পাওয়া সম্ভব। এ ধরনের পরিস্থিতি এবং নিরাপত্তা ইস্যুতে জাতীয় ঐকমত্য প্রয়োজন। শনিবার যুগান্তর ও যমুনা টেলিভিশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক সতর্কতা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। তারা বলেন, এ দেশে জঙ্গি সংগঠন নেই- এটা বলা ঠিক হবে না। তবে এটা বলা যায়, তাদের আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ নেই। বক্তারা আরও বলেন, বিচারহীনতা কিংবা বিচারে বিলম্বের কারণে অপরাধ বাড়ছে। যদি অপরাধীরা গ্রেফতার হয় এবং দেখাতে পারি যে, আমরা ছাড় দেইনি, তবে বিদেশীদের আস্থা ফিরে আসবে।
গোলটেবিল আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম। আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. সা’দত হুসাইন, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হেমায়েত উদ্দিন, সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন, নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমোডর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়া রহমান, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ড. মঞ্জুর এ চৌধুরী ও যুগান্তরের সিনিয়র সাংবাদিক মাহবুব কামাল। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন যমুনা টিভির বার্তা বিভাগের প্রধান জাকারিয়া কাজল। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন যুগান্তরের কূটনৈতিক রিপোর্টার মাসুদ করিম। যুগান্তর কার্যালয়ে বেলা ১১টায় শুরু হয়ে এই আলোচনা চলে বেলা দেড়টা পর্যন্ত। এ সময় বিশেষজ্ঞদের আলোচনার পাশাপাশি সাম্প্রতিক পরিস্থিতির আলোকে রাজনীতিবিদদের মধ্যে বেশ খানিকটা প্রাণবন্ত বিতর্কও হয়। এতে পরস্পরের মধ্যে আস্থার সংকটের কথা যেমন উঠে আসে, ঠিক তেমনি বিদেশীদের মধ্যেও আস্থা সৃষ্টির তাগিদ আসে। জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রাখতে নিরাপত্তা ইস্যুতে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
মাহবুবউল আলম হানিফ : আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, দুই বিদেশী নাগরিক হত্যার ঘটনা অত্যন্ত পরিকল্পিত। সরকারকে বিব্রত করতে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে তা সাদা চোখে দেখা যায়। যারা যুদ্ধাপরাধের বিচারকাজকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়, সরকারের অর্জনকে ম্লান করে দিতে চায় তারা এ ঘটনা ঘটিয়ে বহির্বিশ্বে ভিন্ন বার্তা ছড়িয়ে দিতে চেয়েছে। অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশের নিরাপত্তা সতর্কতা প্রসঙ্গে মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, তাদের কাছে যদি তথ্য থেকে থাকে, তারা কেন সেটা দেয়নি? তাহলে সরকার আগে থেকেই সতর্ক হতে পারত। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে অবশ্যই জাতীয় ঐক্য দরকার। তবে এই ঐক্য যুদ্ধাপরাধী ও জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে নয়। বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা নেই, এটা বললে ভুল হবে উল্লেখ করে মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, একসময় জামায়াত-শিবিরকে প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়ে বিএনপি এ দেশে জঙ্গিবাদের বীজ বপন করেছিল। তাদের সঙ্গে ঐক্য করে জঙ্গিবাদ থেকে মুক্ত হওয়া যাবে না।
মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, বাংলাদেশকে নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে, এখনও হচ্ছে। আমরা নিজেরাই যখন জিএসপি সুবিধা বন্ধ করার ষড়যন্ত্র করি, ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চিঠি দেই তখন বিদেশীরা তো সুযোগ নেবেই। তিনি কোনো বিদেশী কূটনীতিকের কাছে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে বক্তব্য নেয়ার প্রতিযোগিতা থেকে মিডিয়া কর্মীদেরও সরে আসতে বলেন। তিনি বলেন, আমাদের দেশের কোনো কূটনীতিক বিদেশে দায়িত্ব পালনকালে সেদেশের অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয় নিয়ে নাক গলান না। সেদেশের মিডিয়াকর্মীরাও তাদের কাছে কিছু জানতে চান না। অথচ আমাদের দেশে কোনো বিদেশী এলে মিডিয়াকর্মীরা রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু করে দেন।’
মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ : বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি না হলে ধর্মীয় সন্ত্রাসীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সন্ত্রাসবিরোধী জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার ওপর গুরত্ব দিয়ে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আইনের শাসন গড়ে তুলতে হলে আমাদের দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে আরও বেশি পেশাদারিত্বের পরিচয় দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের দুই নেত্রী একে অপরের মুখই দেখেন না। সরকারি দলের হলে আইন এক রকম আর বিরোধী দলের হলে আইন অন্য রকম- এটা মানা যায় না। বর্তমান সরকার ভিন্নমত সহ্য করতে পারে না অভিযোগ করে এই বিএনপি নেতা বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি হোক, স্থিতিশীলতা ফিরে আসুক, তা সরকারি দল চায় না।’
ড. সা’দত হুসাইন : সাবেক মিন্ত্রপরিষদ সচিব ড. সা’দত হুসাইন বলেন, দু’জন বিদেশী খুনের ঘটনার প্রথমটির পর মনে হয়েছিল বিচ্ছিন্ন কিছু। কিন্তু পরের ঘটনার পরই সন্দেহটা এসে গেল। বিদেশী খুনের ঘটনার টাইমিংটা গুরুত্বপূর্ণ। অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধি দল থাকতেই ঘটল। তারা সফর স্থগিত করার কথা জানিয়ে গেলেন। এরপর দ্বিতীয় ঘটনা ঘটল। এরপর অনেক অ্যালার্ট জারি করেছে কয়েকটি রাষ্ট্র। দেখতে হবে তারা কারা। তারা আমাদের ওপর আগে থেকেই কোনো কারণে গোস্বা হয়ে আছে। সে কারণ আমরা সাদা চোখে দেখছি না। এ বিষয়টিকে সরকারের গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। তবে গোস্বা তারা কখন হয়েছে, তা অনুসন্ধানের মাধ্যমে দেখতে হবে। রাগ হয়েছে অন্য কারণে। যা পরে প্রকাশ পায়। কেউ হয়তো কারও ওপর ফুঁসছি। কিছু বলতে পারছি না। তখন ‘তক্কে তক্কে’ থাকি। ঠিক সুযোগ বুঝে ধরা হয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও সেটা কিনা দেখতে হবে।
হেমায়েত উদ্দিন : সাবেক সচিব হেমায়েত উদ্দিন বলেন, আমাদের এখানে প্রথম দেখা গেল নিরাপত্তার অজুহাত তুলে প্রথমে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দল বাংলাদেশে না আসার ঘোষণা দিল। একজন বিশেষজ্ঞ এসে অস্ট্রেলিয়া দলের না আসার ঘোষণা দিলেন। তিনি বললেন, এটি অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ডের সিদ্ধান্ত নয়, সেদেশের সরকারের সিদ্ধান্ত। এই সাবেক পররাষ্ট্র সচিব আরও বলেন, এখানে যারা বিদেশী নাগরিক আছেন ২৪ ঘণ্টা তাদের প্রত্যেকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এদেশে যারা বিদেশী নাগরিক আছেন তাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব রয়েছে তারা কোথায় আছেন, কী কাজ করছে, তা নিজ নিজ দেশের দূতাবাসকে জানিয়ে দেয়া। কিন্তু আমাদের দেশে কি তা হচ্ছে? এখন একজন বিদেশী নাগরিক যদি প্রশাসন কিংবা তার নিজ দেশের দূতাবাসকে না জানিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে বসবাস শুরু করেন তার নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব?
এম হুমায়ুন কবির : সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে সংঘটিত ঘটনাকে বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে। বেশকিছু শূন্যস্থান তৈরি হয়ে আছে। একটি হচ্ছে সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়া। আজ পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, অপরের মতকে গ্রহণ করা, সবাইকে নিয়ে চলার নীতি ইত্যাদিতে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কাউকে পছন্দ না করলে তাকে ‘এলিমিনেট’ (বিনাশ) করার চিন্তা দেখা যায়। সর্বক্ষেত্রেই এটা ঘটছে। এ কারণে এই যে সমাজ আজ দেখছি, তা বিশ্বাসের বাইরে বলে মনে হচ্ছে। আজ বহুত্ববাদী সমাজের ধারণা থেকে সিগুলারিটির (একক) দিকে যাচ্ছি। এই ধারা রাষ্ট্রের ভেতরের কার্যক্রমেও দেখা যাচ্ছে। রাষ্ট্রের ভেতরে বা সঙ্গে বিভিন্ন সংগঠন তাদের ভূমিকা একসঙ্গে রাখে কিনা, তা আলোচনায় আসে না। এই সিঙ্গুলারিটির ধারণা সমস্যা তৈরিতে সহায়তা করে। এই জায়গা থেকে আমরা না সরলে ভবিষ্যতে সমস্যা আরও বাড়বে। তৃতীয় প্রেক্ষাপট হচ্ছে, আমরা শুধু বড় জিনিস দেখি। তার প্রেক্ষাপট দেখি না। আইএস নিয়ে আন্তর্জাতিক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ থেকেও এই বিষয়টি সতর্কতার সঙ্গে দেখতে হবে।
তৌহিদ হোসেন : সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমি তিনটি বিষয় নোটে রাখতে চাই। যে কোনো দেশের মতোই আমাদের দেশেও কট্টরপন্থী লোক আছে। অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। দুই বিদেশী খুনের ঘটনা দেশের ভাবমূর্তির জন্য অবশ্যই ক্ষতিকর। তবে অর্থনীতির জন্য সম্ভাব্য ক্ষতি আরও বেশি।’ তিনি বলেন, এক্ষেত্রে ‘পারসেপশন’টা (দৃষ্টিভঙ্গি) জরুরি। ক্ষতি যা হয়েছে হয়তো তার চেয়ে বেশি প্রচার করছি আমরা। তিনি বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার রাস্তা কয়েকটি। প্রথমত, অপরাধীদের ধরা ও শাস্তি দেয়া। আস্থার সংকটের কথা বলা হচ্ছে। এটা গুরুত্বপূর্ণ। গুলশান-বারিধারা এলাকায় সাঁজোয়া বাহিনী বসিয়ে এর সমাধান হবে না। বরং এতে উল্টো বার্তাও যেতে পারে। আস্থার সংকট দূর করার প্রধান উপায় হচ্ছে প্রকৃত তদন্তের মাধ্যমে আসল অপরাধীকে বের করে বিচারের মুখোমুখি করা। প্রক্রিয়া বিলম্ব হলে অগ্রগতি জানাতে হবে। দেশের ভাবমূর্তির জন্য অগ্রগতি দেখানো জরুরি। আমার বিশ্বাস আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী তা পারবে।
ইশফাক ইলাহী চৌধুরী : নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমোডর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরী বলেন, আমাদের দেশে জঙ্গি সংগঠন নেই এটা বলা ঠিক হবে না। তবে তাদের আন্তর্জাতিক যোগাযোগ নেই। আমাদের দেশে বিভিন্ন সময়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ জঙ্গি গ্রেফতার হয়েছে। তাদের অনেকেই কারাগারে আছে। তাদের কাছ থেকে অত্যাধুনিক অস্ত্রও উদ্ধার হয়েছে। ক্ষুদ্র ইসলামী গোষ্ঠীর শেকড় বাংলাদেশে গভীর থেকে গভীরে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমাদের আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনা ঘটার আগে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। এটিকে অবশ্যই সাধুবাদ দতে হবে। তিনি বলেন, এদেশে হরকাতুল জিহাদের জন্ম হয়েছে মাজারকে টার্গেট করে। জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের জন্ম হয়েছে ভিন্ন মতাবলম্বীদের টার্গেট করে। তবে আইনশৃংখলা বাহিনীর তৎপরতা না থাকলে অনেক ঘটনাই ঘটে যেত। তিনি বলেন, আমার সঙ্গে যার মিল নেই তাকে মেরে ফেরতে হবে এ ধারণা থেকে বের হতে হবে।
অধ্যাপক জিয়া রহমান : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়া রহমান বলেন, ইতালির নাগরিক খুন হওয়ার পর আমরা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে ধারণা করেছিলাম। কিন্তু এর কয়েক দিনের মাথায় রংপুর জাপানি নাগরিক খুন হওয়ার পর ভুল ভাঙে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ নেই এটা বললে ভুল হবে। শিবিরের রগকাটা রাজনীতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদেশে জিয়াউর রহমান সরকার সংবিধান পরিবর্তন করে তাদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। জঙ্গি তৈরির ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছিলেন। দুই বিদেশী খুনের পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে উল্লেখ করে অধ্যাপক জিয়া রহমান বলেন, জিএসপি বন্ধ করে দেয়ার পর যেসব শর্ত দেয়া হয়েছিল বাংলাদেশ তার প্রায় সবকটি পূরণ করেছে। তারপরও জিএসপি ফেরত দেয়া হচ্ছে না। এ থেকে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, এটা গভীর ষড়যন্ত্র।
ড. মঞ্জুর এ চৌধুরী : রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ড. মঞ্জুর এ চৌধুরী বলেন, সন্ত্রাস যে শুধু বাংলাদেশে কিংবা এ অঞ্চলে আছে তা নয়। বিশ্বের অনেক দেশে এ ধরনের সন্ত্রাস হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে গ্লোবাল সন্ত্রাস। তবে আমরা আমেরিকা কিংবা ইউকের চেয়ে খুব বেশি ভয়ংকর অবস্থায় নেই। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও এ ধরনের অনেক সন্ত্রাস হচ্ছে। সেগুলো খুব বেশি প্রচার হচ্ছে না। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, টেরোরিজম মানেই ইসলামিক। ঘটনাটি আসলে তা নয়। এই উপমহাদেশে কেন আমাদের দেশকে বেছে নেয়া হচ্ছে তাও বুঝতে পারছি না। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতি কোনো কোনো রাষ্ট্রের গোস্বা থাকতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মাহবুব কামাল : সাংবাদিক মাহবুব কামাল বলেন, দু’জন বিদেশী হত্যার পেছনে কয়েকটি উদ্দেশ্য থাকতে পারে। সরকারকে অর্থনৈতিকভাবে বিপদে ফেলা। বিনিয়োগ বিঘ্নিত করা। নিছক গোষ্ঠীর স্বার্থেও এটা হতে পারে। আবার আন্তর্জাতিক বড় ডিজাইনের অংশ হতে পারে। বর্তমানে অনেকে ইসলামিক মিলিট্যান্টের দিকে ঝুঁকছে। আমার মতে, কেবল দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে রিমেডি (প্রতিকার) হবে না।
জাকারিয়া কাজল : স্বাগত বক্তব্যে যমুনা টেলিভিশনের বার্তা বিভাগের প্রধান জাকারিয়া কাজল বলেন, আমরা দেখলাম নিরাপত্তার কথা বলে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট দল সফর বাতিল করল। এর দু-একদিন পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি ঘটনা ঘটল। সেখানে প্রকাশ্যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটল। তিনি বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই এমন ঘটনা ঘটে। তবে পার্থক্য একটাই আমাদের দেশে কিছু হলে হৈচৈ শুরু হয়ে যায়। তবে এসব ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে।
সাইফুল আলম : গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, আমরা নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক সতর্কতা নিয়ে আলোচনার আয়োজন করেছিলাম। তবে আলোচনা সেখানে সীমাবদ্ধ থাকেনি। রাজনীতির মধ্যেও গড়িয়েছে। আসলে কোনো কিছুই রাজনীতির বাইরে নয়। দুটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনার কথা এসেছে। পূর্বপরিকল্পিত না ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর অন্যান্য হিসাব এসেছে তা নিয়ে বিশ্লেষণ হচ্ছে। এটা ঠিক যে, ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর অনেক ঘটনা পরপর সংঘটিত হয়েছে। বিষয়গুলো নতুন নয়। ১৯৭১ সাল থেকে আমরা ধরতে পারি। তারই ধারাবাহিকতা এখনও চলছে। সাম্প্রতিক ঘটনা একটা সতর্কবার্তা। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে জাতিগতভাবে আমাদের যে পদক্ষেপ নেয়ার কথা তা নিতে হবে। ষড়যন্ত্রের পথ রুদ্ধ করে দিতে হবে। যদিও এর শেষ কোথায় আমরা জানি না। তবে সবাই মিলে রুখে দাঁড়াতে হবে। - 
See more at: http://www.jugantor.com/last-page/2015/10/18/338452#sthash.VDch4s5T.dpuf




খবরের বাকি অংশ

রায়পুরার কৃতি সন্তান নিপোর্টের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ওয়াহিদ হোসেন এনডিসি

‘বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক এন্ড হেলথ সার্ভে ২০১৪’-এর চট্টগ্রাম বিভাগীয় অবহিতকরণ সেমিনার বক্তারা বলেছেন, মাতৃস্বাস্থ্য ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বিভাগের অগ্রগতি সন্তোষজনক। চট্টগ্রাম বিভাগে গত ৩ বছরে গর্ভকালীন সেবা গ্রহণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বা

অপ্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যেকোন সেবাদানকারীর কাছ থেকে কমপক্ষে একবার গর্ভকালীন সেবা গ্রহণের হার ৬৩ থেকে ৭৫ শতাংশে-এ উন্নীত হয়েছে। এ সময়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেবাদানকারীর কাছ থেকে কমপক্ষে ১বার গর্ভকালীন সেবা গ্রহণের হার বেড়েছে ১১ শতাংশ। তবে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা স্বত্ত্বেও কমপক্ষে চারবার গর্ভকালীন চেকআপের হার বেড়েছে কিছুটা কম, ৬ শতাংশ।
জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (নিপোর্ট) এর উদ্যোগে গতকাল রবিবার বিএমএ চট্টগ্রামের মিলনায়তনে সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন নিপোর্টের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ওয়াহিদ হোসেন এনডিসি। প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বিমান কুমার সাহা এনডিসি। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিবার পরিকল্পনা চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক মো. নূরুল আলম, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক (এমসি-আরএইচ) ডা. মোহাম্মদ শরীফ, চট্টগ্রাম বিভাগের সহকারী পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. মো. সালাহউদ্দিন। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন নিপোর্টের পরিচালক (গবেষণা) মো. রফিকুল ইসলাম সরকার।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বিমান কুমার সাহা এনডিসি বলেন, সুস্থ মা ও সুন্দর শিশু বাংলাদেশের উজ্জ্বল আগামীর প্রতীক। সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য মন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি পূরণে সরকার কাজ করছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা দান এ প্রতিশ্রুতি পূরণে একটি অনন্য নজির হিসেবে দেশে বিদেশে প্রশংসিত।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক হেলথ সার্ভে কর্মসূচির জন্য একটি মাইলফলক, যা বলে দেয় আমরা কোথায় আছি, কোথায় যেতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে নিপোর্টের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ওয়াহিদ হোসেন এনডিসি বলেন, মা ও শিশু স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বিভাগের সাম্প্রতিক সাফল্য প্রশংসার দাবি রাখে। তবে অনেক ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম এখনো জাতীয় হারের চেয়ে পিছিয়ে আছে। তিনি চট্টগ্রাম বিভাগে স্বাস্থ্য সেবা সম্প্রসারণের অসম্পূর্ণ কাজ এগিয়ে নেয়ার জন্য কর্মকর্তা ও কর্মীবাহিনীকে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগে পরিবার পরিকল্পনার অপূর্ণ চাহিদা পূরণে আরও আন্তরিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশের প্রত্যাশায় স্বাস্থ্যবান প্রজন্ম গড়ে তোলার জন্য মা ও শিশু পুষ্টি নিশ্চিত করার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
সেমিনারে চট্টগ্রাম বিভাগে কর্মরত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের জেলা, উপজেলা ও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারি, এনজিও কর্মকর্তা এবং মহিলা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানগণ অংশগ্রহণ করেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন নিপোর্ট-এর তত্ত্বাবধানে ইউএসএইড/বাংলাদেশ-এর আর্থিক সহায়তায় এ সার্ভে পরিচালনা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের আইসিএফ ইন্টারন্যাশনাল এ সার্ভের কাজে কারিগরি সহায়তা প্রদান করে।
সেমিনারে বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক এ- হেলথ সার্ভে ২০১৪ এর ফলাফল তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে বর্তমানে মহিলা প্রতি গড় সন্তান সংখ্যা বা টিএফআর ২ দশমিক ৩। চট্টগ্রাম বিভাগে বর্তমান টিএফআর ২ দশমিক ৫। গত এক দশকে চট্টগ্রাম বিভাগে মহিলা প্রতি গড় সন্তান সংখ্যা ১ সন্তান হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশে ৬২ শতাংশ দম্পতি পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। এদের মধ্যে ৫৪ শতাংশ দম্পতি আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করেন। চট্টগ্রাম বিভাগে আধুনিক পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারের হার ৪৭ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিভাগে গত ৩ বছরে আধুনিক পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির ব্যবহার ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময়ে খাবার বড়ির ব্যবহার ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও দীর্ঘ মেয়াদী ও স্থায়ী পদ্ধতির ব্যবহার ১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
সার্ভে রিপোর্টে আরো বলা হয়, গত ৩ বছরে চট্টগ্রাম বিভাগে দক্ষ প্রসব সেবার ব্যবহারের হার ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সাথে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রসব বেড়েছে ১০ শতাংশ এবং সিজারিয়ান প্রসব বেড়েছে ৪ শতাংশ। দেশে সিজারিয়ান প্রসবের হার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ১০ বছরে সিজারিয়ান প্রসবের হার ৬ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে ২৩ শতাংশ প্রসব সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। সারাদেশে ৩৭ শতাংশ প্রসব হয় হাসপাতাল বা ক্লিনিকে। আর এসব প্রসবের ৬০ শতাংশই হলো সিজারিয়ান প্রসব। প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিকে সম্পাদিত ৮০ শতাংশ প্রসবই হয় সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ হলো সিজারিয়ান প্রসবের হার ১৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখা। চট্টগ্রাম বিভাগে সিজারিয়ান প্রসবের হার বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি, ১৮ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিভাগে বর্তমানে বয়সের তুলনায় উচ্চতা কম এমন শিশুদের হার ৩৮ শতাংশ এবং বয়সের তুলনায় ওজন কম এমন শিশুদের হার ৩৬ শতাংশ। গত ৩ বছরে বয়সের তুলনায় উচ্চতা কম এমন শিশুদের হার ৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এ সূচকের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বিভাগ এইচডিএনএসডিপি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সফল হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম বিভাগে আন্ডার-ওয়েট বা বয়সের তুলনায় কম ওজনের শিশুদের হার এখনো লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ শতাংশ বেশি। গত ৩ বছরে এক্ষেত্রে তেমন অগ্রগতি হয়নি।

খবরের বাকি অংশ

রায়পুরার কৃতি সন্তান নবনিযুক্ত হাই কমিশনার মোঃ তৌহিদ হোসেন


Date: 08-07-2012

রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

রাষ্ট্রপতির সাথে আজ বঙ্গভবনে দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের নবনিযুক্ত হাই কমিশনার মোঃ তৌহিদ হোসেন সৌজন্য সাক্ষাত করতে এলে রাষ্ট্রপতি এ আহবান জানান ।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্যিক ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ক্রমান্বয়ে তা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে চমৎকার দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক বিদ্যমান। রাষ্ট্রপতি ১৯৯৭ সালে আমাদের মহান স্বাধীনতা দিবসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘শিখা চিরন্তন’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্বের অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার অংশ গ্রহণের কথা এসময় কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন।

রাষ্ট্রপতি নবনিযুক্ত হাইকমিশনারের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টকে শুভেচ্ছা জানান এবং তাঁর কল্যাণ কামনা করেন।

তিনি নবনিযুক্ত হাইকমিশনারেরও সাফল্য কামনা করেন।

এসময় রাষ্ট্রপতির সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন।

খবরের বাকি অংশ

কম্পিউটারের বই

ইংরেজী গ্রামার বই

পৃষ্ঠাসমূহ

বইটি পড়তে বইটির উপরে ক্লিক করুন

লেকচার সিট

ফটোশপ বই

ইংরেজী গ্রামার বই

অ্যাডবি ইলাস্ট্রেটর